Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১১ জানুয়ারি ২০২১

ইতিহাস

           ইতিহাস

           বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি)  বাংলাদেশ এবং বর্হিবিশ্বের মাঝে খাদ্যশস্য, জ্বালানি, ভোজ্য তেল, পোশাক, প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্য, চা, চামড়া, রাসায়নিক দ্রব্যসহ কনটেইনারজাত যে কোন মালামাল আমদানি ও রপ্তানির উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় সংস্থা। ১৯৭২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির আদেশ বলে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মালামাল আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে জাহাজ ও জলযোগাযোগ সবচেয়ে সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য। অপরদিকে বাংলাদেশের রয়েছে ৭১১ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র জলসীমানা। বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলটি বঙ্গোপসাগর তথা ভারত মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত। ফলশ্রুতিতে আমাদের আমদানি ও রপ্তানির প্রায় নববই শতাংশ সমুদ্রপথেই হয়ে থাকে। একটি সাগর তীরবর্তী নদীমাতৃক দেশ হিসাবে বাংলাদেশের নিজস্ব কার্গো, কনটেইনার এবং ট্যাংকারের বিভিন্ন আকৃতির জাহাজের বহর থাকা অত্যাবশ্যকীয়। দেশের স্বাভাবিক এবং জরুরি পরিস্থিতিতে এ ধরনের জাহাজ বহরের ভূমিকা অপরিসীম। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ বিষয়টি অনুধাবন করা গিয়েছিল। এ উদ্দেশ্যকে সফল করার নিমিত্তে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন জন্মলগ্ন থেকে কাজ করে যাচ্ছে।

শিপিং কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠার পরপরই বাংলার দূত এবং বাংলার সম্পদ নামের দুটো সমুদ্রগামী জাহাজ বিএসসিতে সংযোজিত হয়। তারপর থেকে বিএসসি এ যাবত সর্বমোট ৪৪টি জাহাজ সংগ্রহ করে। তবে জাহাজের স্বাভাবিক বয়সজনিত কারণে এবং বাণিজ্যিকভাবে অলাভজনক বিবেচিত হওয়ায় বিভিন্ন পর্যায়ে ৩৬টি জাহাজ বিক্রি বা স্ক্র্যাপ করা হয়। বর্তমানে ০৮টি জাহাজের মিশ্র বহর নিয়ে বিএসসি সমুদ্রপথে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পতাকা বহন করছে। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাণিজ্যিক জাহাজের মাস্টার, ইঞ্জিনিয়ার ও নাবিকদের প্রচেষ্টায় জাহাজগুলি তাদের গতিশীল কর্মতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।

সাত সদস্যের একটি পরিচালনা পরিষদের মাধ্যমে বিএসসি পরিচালিত হয়। নৌপরিবহণ মন্ত্রী পদাধিকার বলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান। পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সচিব; ব্যবস্থাপনা পরিচালক; মহাপরিচালক মনিটরিং সেল; নির্বাহী পরিচালক (অর্থ); নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্য); নির্বাহী পরিচারক (প্রযুক্তি)। বিএসসির প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামে অবস্থিত। এছাড়া ঢাকা ও খুলনায় দুটি সাব অফিস রয়েছে। বিএসসির সব অফিসেই বাণিজ্য এবং জাহাজ চার্টার বা ভাড়া সংক্রান্ত দুটি বিভাগ রয়েছে। বহির্বিশ্বে মালামাল আনা-নেয়ার সুবিধার্থে সিঙ্গাপুর ও লন্ডনে দুটি আঞ্চলিক অফিস খোলা হয়েছে। জাহাজ মেরামত সংক্রান্ত কর্মকান্ড জাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত বিভাগ তথা প্রযুক্তি শাখা দেখাশোনা করে এবং জাহাজ ভাড়া, গণযোগাযোগ ও কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপার বাণিজ্য ও চার্টার বিভাগ তত্ত্বাবধান করে।

বিএসসি’র জাহাজসমূহ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। বিএসসি বহরের জাহাজগুলির গড় বয়স এখন প্রায় ২৮ বছর। এ জাহাজগুলির রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিত্য নতুন আন্তর্জাতিক মেরিটাইম বিধি-নিষেধ মেনে চলা অত্যন্ত কঠিন এবং ব্যায়বহুল। এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি পালন করে যাচ্ছে সংস্থার জাহাজ মেরামত বিভাগ।

বিএসসি একটি সরকারি দেশীয় প্রতিষ্ঠান হলেও এর কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত হওয়ায় একে জাতীয় মেরিটাইম আইন মেনে চলার পাশাপাশি অধীনস্থ জাহাজসমূহকে সকল আন্তর্জাতিক এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তৃতীয় দেশের মেরিটাইম আইন অত্যাবশ্যকীয়ভাবে বাস্তবায়ন করতে হয়। মেরিটাইম আইনসমূহের মূল উদ্দেশ্য হলো জীবন ও সম্পদের অধিকতর নিরাপত্তা বিধান এবং সমুদ্রে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করা। যা কিনা আইএমও-এর পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হয়ে থাকে। বিএসসি’র জাহাজ সমূহে ইন্টারন্যাশনাল সেফটি ম্যানেজমেন্ট (কোড এবং ইন্টারন্যাশনাল শিপ অ্যান্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি (কোড চালু রয়েছে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক ক্লাসিফিকেশন সোসাইটি অর্থাৎ জার্মানিশেয়ার লয়েডের সনদায়ন সংগ্রহ করা হয়েছে। ২০১১ সাল নাগাদ প্রতিটি জাহাজে একটি লং রেঞ্জ আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ট্রাকিং সিস্টেম (ব্যবস্থা প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। এভাবে নতুন নতুন আন্তর্জাতিক আইন ও ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে বিএসসিকে প্রতিবছর প্রচুর অর্থ লগ্নি করতে হয়।

বিএসসি’র জাহাজ বহরে চাহিদা অনুযায়ী প্রতিবছর বেশ কিছু সংখ্যক ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাডেট নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তাদেরকে জাহাজে এবং মেরিন ওয়ার্কশপে অন দ্যা জব ট্রেনিং এবং ফেইজ থ্রি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অপরদিকে সংস্থার ট্রেনিংপ্রাপ্ত মাস্টার ও ইঞ্জিনিয়ারগণ মেরিন একাডেমী ও ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউটে প্রেষণে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। এদের অনেকেই আবার বিভিন্ন বিদেশি জাহাজসংস্থায় চাকরি পেয়ে থাকেন। এভাবে দক্ষ মেরিটাইম জনশক্তি (কর্মকর্তা ও নাবিক) গঠনে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিএসসি বিশেষ ভূমিকা রাখছে। প্রতিস্থাপন ও সম্প্রসারণ কর্মসূচির আওতায় বিএসসি জাতীয় জাহাজ বহরকে সুষম ও আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।