অদ্য ০৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩খ্রি. তারিখে অনুষ্ঠিত বিএসসি’র ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে কেক কাটা হয় এবং পরবর্তীতে এলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় সংস্থার নব নিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মোঃ জিয়াউল হক, (ট্যাজ ), ওএসপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, বিএন বলেন,“ বর্তমানে বিএসসি সরকারের পরিবহন খাতে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। ২০২১-২২অর্থ বছরে বিএসসি ২২৫ কোটি টাকা লাভ করে, আগামীতে আরও নতুন নতুন জাহাজ বিএসসি’র বহরে যুক্ত হওয়ার মাধ্যম বিএসসি’র কার্যক্রম আরও অধিক ব্যপ্তিতে সম্প্রসারিত হবে যার প্রেক্ষিতে অধিক মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি কর্মস্থানসৃষ্টিসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিএসসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।” সর্বশেষে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে বিএসসি’র উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রেখে সমুদ্র পরিবহনে জনগণ ও সরকারের অংশীদারিত্ব নিশ্চিতকরণের জন্য তিনি সংস্থার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের আহবান জানান। কর্মসূচিটি তত্বাবধান করেন জনাব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন, উপ-সচিব ও মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন), বিএসসি, চট্টগ্রাম।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমুদ্র পরিবহনে জনগণ ও সরকারের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাত্র ২৫ দিনের মাঝে তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭২ সনের ০৫ ফেব্রæয়ারি রাষ্ট্রপতির ১০ নং আদেশমূলে প্রতিষ্ঠা করেন আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক জাহাজ পরিচালনাকারী একমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন তথা বিএসসি। উপক‚লবর্তী একটি দেশে নৌবাণিজ্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করে সরকার গঠনের পর বৈদেশিক বাণিজ্যের যাবতীয় কর্মকান্ড যথাযথভাবে পালন করতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিজের হাতে রাখেন তিনি। জন্মলগ থেকে আন্তর্জাতিক নৌপথে নিরাপদ ও দক্ষ হাতে পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে বিএসসি। দেশের আমদানী রপ্তানির এক বিশাল অংশ বিএসসি’র জাহাজের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। এর মাধ্যমে বিএসসি পরিবহন খাতে জাতীয় অর্থনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পাশাপাশি জাতির যে কোন দূর্যোগ মুহূর্তে বিএসসি’র জাহাজসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া বৈদেশিক পণ্য পরিবহন করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন।
১৯৭২ সালে অর্থাৎ বিএসসির যাত্রা শুরুর সময় প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কোনো জাহাজ ছিল না। বঙ্গবন্ধুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ইন্দিরা গান্ধীর সহায়তায় বিএসসি’র প্রথম জাহাজ হিসেবে যুক্ত হয় কার্গো জাহাজ ‘বাংলার দূত’।
১৯৯১ সালে ‘বাংলার শিখা’ সংস্থার জাহাজ বহরে যুক্ত হওয়ার পর দীর্ঘ ২৭ বছরে আর কোন জাহাজ যুক্ত হয়নি। এ দীর্ঘ ২৭ বছর পর বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানন্ত্রীর প্রচেষ্টায় চীন সরকারের ঋণ সহায়তায় ৬(ছয়)টি নতুন জাহাজ (প্রতিটি প্রায় ৩৯,০০০ ডিডবিøউটি সম্পন্ন ৩টি নতুন অয়েল-ক্যামিকেল ট্যাংকার এবং ৩টি নতুন বাল্ক ক্যারিয়ার) বিএসসি’র জাহাজ বহরে যুক্ত হয়। তন্মধ্যে ০১ নভেম্বর, ২০১৮ তারিখে প্রথম জাহাজ “বাংলার জয়যাত্রা” এবং অবশিষ্ট পাঁচটি জাহাজ গত ২৮ নভেম্বর, ২০১৯ খ্রিঃ তারিখে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুভ উদ্বোধন করেন। জাহাজগুলো আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের পতাকা স্বগৌরবে বহন করে চলছে।
২০০৮ সালের শেষের দিকে শুরু হওয়া বিশ্ব মন্দার বিরূপ প্রভাবে আন্তর্জাতিক শিপিং ট্রেডে ধ্বস নামে এবং সেই সঙ্গে জাহাজ ভাড়া সর্বনিম্ন পর্যায়ে হ্রাস পায় । এছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি জাহাজী কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে যন্ত্রাংশের দুষ্প্রাপ্যতা ও উচ্চমূল্য, জাহাজ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ এবং আন্তর্জাতিক শিপিং এ নিত্য নতুন বিধি সংযোজিত হওয়ায় কর্পোরেশনের জাহাজ পরিচালনা ব্যয় অত্যাধিক বৃদ্ধি পায়। এ প্রতিকূল পরিবেশে অতি পুরাতন জাহাজবহর দিয়ে শিপিং বাণিজ্যে সফলভাবে বাণিজ্যে টিকে থাকার স্বীকৃত স্বরূপ স্পেনের মাদ্রিস্থ গ্লোবাল লিডারস ক্লাব কর্তৃক বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনকে গত ৫ নভেম্বর, ২০১২ স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে “ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশিপ ইন ইমেজ এন্ড কোয়ালিটি” সম্মাননা দেয়া হয়।
বিএসসি’র জাহাজ মেরিটাইম শিল্পের সর্বোচ্চ মানরক্ষাকারী দেশ গুলোতে যাতায়াত করেছে যা International Shipping এ বাংলাদেশ Flag এর নাম উজ্জল করেছে। সর্বোচ্চ মানরক্ষাকারী যেসব দেশে সম্প্রতি বিএসসি জাহাজ যাতায়াত করেছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য Australi’র Gladstone, Europe এর Rotterdam, USA এর Houston/New Oreland এবং Canada এর Halifax| বিএসসির জাহাজগুলো বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে পরিচালিত হওয়ায়, স্বভাবতই বিভিন্ন Time Zone এ অবস্থান করে। বিভিন্ন Time Zone এবং বিভিন্ন বন্দরের Requirement Comply করে দক্ষতার সাথে বিএসসি তার জাহাজগুলো পরিচালনা করছে।
মুজিববর্ষের মাহেন্দ্রক্ষণে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সহৃদয় পৃষ্ঠপোষকতা ও অবিচল পদক্ষেপে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিসহ সকল সদস্য এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের সুযোগ্য দিক-নির্দেশনা ও সক্রিয় সহযোগিতায় বিএসসি বর্তমানে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর মাঝেও সফলভাবে ব্যবসায় কার্যক্রম অব্যাহত রাখার মাধ্যমে গত অর্থ বছরে (২০২১-২২) বিএসসি মোট আয় করেছে ৫১৭.৪০ কোটি টাকা ও নীট মুনাফা অর্জন করে ২২৫.৮০ কোটি টাকা এবং সম্মানীত শেয়ারহোল্ডারগণকে ২০২১-২২ অর্থবছরের নীট লাভ হতে ২০% হারে নগদ লভ্যাংশ প্রদান করা হয়েছে; যা বিএসসির সক্ষমতার পরিচয়ই বহন করে। র্সবশষে ২০০৮-০৯ র্অথ বছরে বএিসস’ির ১০,২৬,০০,৮৭৬/- লোকসান হয় এর পর থকেে প্রতবিছর বএিসসি মুনাফা লাভ করছ।
বিএসসসি’র ২০০৯-১০ হতে ২০২০-২১ অর্থ বছর পর্যন্ত আয়, ব্যয় এবং নীট লাভঃ
অর্থ বছর |
মোট আয় (কোটি টাকায়) |
মোট ব্যয় (কোটি টাকায়) |
নীট লাভ (কোটি টাকায়) |
২০০৯-১০ |
২৭৩.২৫ |
২৫৯.৯১ |
১৩.৩৪ |
২০১০-১১ |
২৬৬.৬৬ |
২৬৪.৭৯ |
১.৮৭ |
২০১১-১২ |
২৮২.০১ |
২৮০.৫৫ |
১.৪৬ |
২০১২-১৩ |
৩২৮.৫৯ |
৩২৬.৯৬ |
১.৬৩ |
২০১৩-১৪ |
১৭১.১৪ |
১৬৭.৭৭ |
৩.৩৭ |
২০১৪-১৫ |
১৩০.০১ |
১২৪.৬৭ |
৫.৩৪ |
২০১৫-১৬ |
১১৮.৮১ |
১১২.০৮ |
৬.৭৩ |
২০১৬-১৭ |
১১৬.৫৫ |
১০৭.৮৯ |
৮.৬৬ |
২০১৭-১৮ |
১২৬.৫২ |
১১৪.০০ |
১২.৫২ |
২০১৮-১৯ |
২২২.৯৭ |
২০৫.৪৬ |
১৭.৫১ |
২০১৯-২০ |
৩২২.৮৪ |
২৮১.৩৭ |
৪১.৪৭ |
২০২০-২১ |
৩২২.৯৭ |
২৫০.৯৫ |
৭২.০২ |
২০২১-২২ |
৫১৭.৩৯ |
২৪৪.৩২ |
২২৫.৮ |
বিএসসি’র জনবল ও সাংগঠনিক কাঠামো:
|
১ম শ্রেণী |
২য় শ্রেণী |
৩য় শ্রেণী |
৪র্থ শ্রেণী |
মোট |
কর্মরত পদ |
৬৩ |
১৬ |
১১৮ |
২২ |
২১৯ |
যা বর্তমানে বিএসসি’ র জাহাজ বহরের প্রক্ষাপটে যথাযথ আছে।
বিএসসি’র বর্তমান জাহাজ বহর
বিএসসি’র বহরে বর্তমানে ০৮ টি জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে এম ভি বাংলার জয়যাত্রা, এম ভি বাংলার সমৃদ্ধি, এম ভি বাংলার অর্জন জাহাজ তিনটি বাল্ক ক্যারিয়ার এবং এম টি বাংলার অগ্রযাত্রা, এম টি বাংলার অগ্রদূত ও এম টি বাংলার অগ্রগতি জাহাজ ৩টি অয়েল-ক্যামিক্যাল ট্যাংকার। এছাড়া, এম টি বাংলার জ্যোতি ও এম টি বাংলার সৌরভ জাহাজ ০২ টি লাইটারেজ জাহাজ হিসাবে পরিচালিত হচ্ছে। উল্লেখ্য বিগত ২০ বছর পর প্রথম কোনো বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজ হিসেবে বিএসসি’র জাহাজ ‘এম টি বাংলার অগ্রদুত’ প্রথম ধাপেই AMSA Inspection পাশ করে সর্বোচ্চ মেরিটাইম স্ট্যান্ডার্ড রক্ষাকারী দেশ অস্ট্রেলিয়ার গø্যাডস্টোন বন্দরে সুচারুরুপে কার্গো অপারেশন সম্পন্ন করে। এছাড়া বাংলাদেশে বিএসসি ই একমাত্র সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রচেষ্ঠায় OCIMF/SIRE Inspection রক্ষা করে Chemical Tanker Management চালাচ্ছে।
চলমান প্রকল্প:
জি টু জি ভিত্তিতে ০৬টি নতুন জাহাজ ক্রয়ের এ প্রকল্পের আওতায় ০৪ (চার)টি নতুন জাহাজ ক্রয় ২ (দুই) টি ক্রুড অয়েল মাদার ট্যাংকার প্রতিটি ১১৪,০০০ ডিডব্লিউটি সম্পন্ন এবং ২ (দুই) টি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার প্রতিটি ৮০,০০০ ডিডব্লিউটি সম্পন্ন জাহাজ ক্রয়ের প্রকল্প বর্তমানে চলমান। এটি এখন অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে।
ভবিষৎ পরিকল্পনা:
(১)জি টু জি ভিত্তিতে ০৪টি নতুন জাহাজ ক্রয় ২ টি মাদার প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার প্রতিটি ৮০,০০০ ডিডব্লিউটি সম্পন্ন এবং ২ টি মাল্টিপারপাস মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার প্রতিটি ৮০,০০০ ডিডব্লিউটি সম্পন্ন।
(২) ৬ (ছয়)টি নতুন প্রতিটি ২,৫০০-৩,০০০ টিউজ সম্পন্ন সেলুলার কন্টেইনার জাহাজ (কোরিয়া হতে)।
(৩) ৬ (ছয়)টি নতুন প্রতিটি ২,৫০০-৩,০০০ টিউজ সম্পন্ন সেলুলার কন্টেইনার জাহাজ (অস্ট্রেলিয়া হতে)।
(৪) ২ (দুই)টি নতুন প্রতিটি ১৪০,০০০ সিবিএম ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এলএনজি ক্যারিয়ার ক্রয়।
(৫) ২ (দুই)টি নতুন প্রতিটি ১৭৪,০০০ সিবিএম ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এলএনজি ক্যারিয়ার ক্রয়।
(৬) ২ (দুই)টি নতুন প্রতিটি ১৮০,০০০ সিবিএম ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এলএনজি ক্যারিয়ার ক্রয়।
(৭) ১০(দশ) টি নতুন প্রতিটি ১০,০০০-১৫,০০০ ডিডব্লিউটি সম্পন্ন বাল্ক ক্যারিয়ার ক্রয়।
বর্তমান সরকারের রূপকল্প-২০৪১, ডেল্টা প্ল্যান, পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, এসডিজি, সুনীল অর্থনীতি (ইষঁব ঊপড়হড়সু) এবং সামুদ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নের অংশ হিসেবে বর্তমান বাণিজ্যিক চাহিদাকে বিবেচনায় নিয়ে বিএসসি’র জন্য বিভিন্ন ধরণ ও ধারণক্ষমতা সম্পন বেশ কিছু সংখ্যক জাহাজ অর্জনের পরিকল্পনা রয়েছে। সামুদ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নের অংশ হিসেবে বিএসসি’র জাহাজ অর্জন পরিকল্পনার মধ্যে একাধিক বিভিন্ন আকার