বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) বহরে যুক্ত হওয়ার পর থেকে জাহাজ দুইটি থেকে আয় হচ্ছে দিনে ২০ হাজার ডলারের বেশি। আন্তর্জাতিক রুটে বিএসসি সর্বশেষ ২০১৪-১৫ সালে শ্রীলঙ্কায় রপ্তানি করা চালের চালান পরিবহন করেছিল। তখন ‘বাংলার কল্লোল’ ও ‘বাংলার কাকলী’ জাহাজে চাল পাঠানো হয়েছিল।
প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক (কারিগরি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, ‘এমভি বাংলার জয়যাত্রা’ নামের নতুন পণ্যবাহী জাহাজটি গত ২৭ জুলাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) বিএসসিকে বুঝিয়ে দেয়। এরপর ১০ অক্টোবর বুঝিয়ে দেওয়া হয় ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজটি। চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় ১ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বিএসসি’র জন্য জাহাজগুলো নির্মাণ করছে চীনের জিয়াংশু নিউ ইয়াংজি শিপবিল্ডিং কোম্পানি লিমিটেড। এর মধ্যে চীন সরকার দিচ্ছে ১ হাজার ৪৪৮ কোটি এবং বিএসসি দিচ্ছে ৩৯৫ কোটি টাকা। সব জাহাজই ৩৯ হাজার মেট্রিকটন ধারণ ক্ষমতার (ডিডব্লিউটি)।
‘জয়যাত্রা’ চীন থেকে বাংলাদেশে খালি না এনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফুজায়রা বন্দর থেকে একাধিক আমদানিকারকের ৩৭ হাজার ৫০০ টন নুড়ি পাথর নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আসে। সেখানে থাকা অবস্থায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাহাজটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সেটি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাড়া বন্দরে যায়, সেখান থেকে চাল নিয়ে পশ্চিম আফ্রিকার আবিদজান বন্দর ও সেনেগালের ঢাকার বন্দরে যাওয়ার কথা রয়েছে জাহাজটির।
‘সমৃদ্ধি’ ডেলিভারি নেওয়ার পর চীন থেকে স্টিলজাতীয় পণ্য নিয়ে মালয়েশিয়ার সামালাজো বন্দরে পৌঁছে। এরপর সেটি থাইল্যান্ডের কোচিন বন্দর চাল লোডের জন্য চলে আসে। চাল নিয়ে জাহাজটিও যাবে পশ্চিম আফ্রিকায়।
সূত্র জানায়, চুক্তি অনুযায়ী দুইটি জাহাজের ভাড়া বাবদ ১৫ দিনের আগাম পরিশোধ করছে চার্টারার প্রতিষ্ঠান। এর বাইরে জাহাজের জ্বালানি, বন্দরের খরচ, স্টিভিডোরিং খরচ সব তারা বহন করছে। বিএসসি শুধু টেকনিক্যাল রিপেয়ার, সার্ভে, ক্যাপ্টেন ও ক্রুদের বেতন-ভাতা, তাদের ফ্রেশ ওয়াটার, ইঞ্জিনের লুব অয়েল সরবরাহ বাবদ খরচ বহন করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসসির একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, একটি নতুন জাহাজের লাইফটাইম হচ্ছে ২৫ বছর। মেরিটাইম সেক্টরে মন্দা না নামলে অল্প সময়ের মধ্যে বিএসসির জন্য চীনে তৈরি নতুন তিনটি অয়েল ট্যাংকার ও তিনটি কার্গো জাহাজে বিনিয়োগের টাকা তুলে লাভের মুখ দেখবে। জাহাজগুলো যদি দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া যায় তবে লাভ বেশি হবে। ছয়টি জাহাজের মধ্যে ‘এমটি বাংলার অগ্রযাত্রা’ আগামী ১২ ডিসেম্বর বিএসসিকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে জাহাজটির ‘সি-ট্রায়াল’ চলছে চীনে। পর্যায়ক্রমে বাকি তিনটি জাহাজ ‘এমভি বাংলার অর্জন’, ‘এমটি বাংলার অগ্রদূত’ ও ‘এমটি বাংলার অগ্রগতি’ বিএসসিকে বুঝিয়ে দেবে সিএমসি।
সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালে সর্বশেষ বিএসসির বহরে যুক্ত হয়েছিল চীনে নির্মিত ‘এমভি বাংলার শিখা’। বর্তমানে মাত্র দুইটি অয়েল ট্যাংকার আছে বিএসসির বহরে। ‘এমটি বাংলার জ্যোতি’ ও ‘এমটি বাংলার সৌরভ’ ১৯৮৭ সালে নির্মিত হয়েছিল ডেনমার্কে। ট্যাংকার দুটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ বড় ট্যাংকার থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সংগ্রহ করে পতেঙ্গার বিভিন্ন ডিপোতে নিয়ে আসে।
-সংগৃহীত(বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম)