নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী নৌ-বাণিজ্য সহায়ক পরিবহন নেটওয়ার্কয়ের ভিত গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে সরাসরি তাঁর অধীনে রেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সুচিন্তিত দিক-নির্দেশনায় তাঁর জীবদ্দশায় ১৯৭৪ সালের মধ্যে ২৬টি সমুদ্রগামী জাহাজ বিএসসির বহরে সংযোজনের ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধু শিপিং সেক্টরকে বিশ্বের যে জায়গায় নিতে চেয়েছিলেন; আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা সে জায়গায় নিয়ে যেতে পারিনি।
বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিএসসিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করতে সক্ষম হব। বর্তমান সরকার কর্তৃক সামগ্রিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বিএসসি’র উন্নয়নে নানাবিধ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিএসসি’র বহরে ৬টি নতুন জাহাজ যুক্ত হয়েছে। আরো ৬টি নতুন জাহাজ সংগ্রহের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) প্রতিমন্ত্রী ঢাকায় বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) ভবনে অনলাইনে অনুষ্ঠিত বিএসসি’র বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মানুষের নিরাপত্তা ছিলনা। সংসদ সদস্যসহ সবশ্রেণি পেশার মানুষের ওপর আক্রমণ হয়েছে। জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর অসংখ্যবার আক্রমণ হয়েছে। ৫০০ জায়গায় বোমা মেরে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারের বিকল্প সরকার, সচিবালয়ের বিকল্প সচিবালয়, তৈরি করে চারিদিকে অন্ধকার নামিয়ে এনেছিল। সমগ্র পৃথিবীর দৃষ্টি সরিয়ে ফেলেছিল। বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করেছিল।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১১ বছরে দেশ আজ তলানি থেকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দিন বদলের সনদ ঘোষণা করেছিলেন। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ মনে করে দিন বদলে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করেছেন। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে থেকে বিএসসি’র এজিএম করছি। এসব কিছু সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শুধু স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেননা, তিনি আগামীর স্বপ্ন দেখান। তাঁর নেতৃত্বে দরিদ্র দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাচ্ছি; সেখান থেকে ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হব। আমরা স্বপ্ন জয়ের পথে আছি। দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সেগুলো মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেখানে স্থবির প্রায় সেখানে বিএসসি ২০১৯-২০ অর্থ বছরে আয় করেছে প্রায় ৩২২ কোটি টাকা এবং ব্যয় হয়েছে ২৪৫ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে সংস্থার নীট মুনাফা হয়েছে ৪১.৪৭ কোটি টাকা।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ খাতের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কয়েকটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এছাড়া দেশের জ্বালানী সংকট নিরসনের জন্য সরকার কর্তৃক তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কয়লা, এলএনজি এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)’র পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিবহন ছাড়াও রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন ও আর্থিকভাবে লাভজনক বিবেচনায় বিভিন্ন সাইজ ও ধরণের জাহাজ ক্রয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ (স্বার্থরক্ষা) বিল, ২০১৯ পাশ করা হয়েছে। যার ফলে সরকারি পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে সমুদ্রপথে পরিবহনে বিএসসি অগ্রাধিকার পাবে।
অনলাইন সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর সুমন মাহমুদ সাব্বির।
বার্ষিক সাধারণ সভায় শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০% নগদ লভ্যাংশ (ক্যাশ ডিভিডেন্ড) ঘোষণা করা হয়।