চট্টগ্রাম:
আগামী ২৩ বছরে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মিশ্র বাণিজ্যিক জাহাজ বহরে যুক্ত হবে ৩২টি জাহাজ। বর্তমানে ৩০ বছরের পুরোনো ট্যাংকার ‘এমটি বাংলার সৌরভ’ ও ‘বাংলার জ্যোতি’ এবং সম্প্রতি চীন থেকে আনা নতুন বাল্ক ক্যারিয়ার ‘এমভি বাংলার জয়যাত্রা’ ও ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ রয়েছে বিএসসির বহরে।
মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) বিএসসির সম্মেলন কক্ষে ৪১তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর ইয়াহ্ইয়া সৈয়দ এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, দেশে আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহনে সমুদ্রগামী জাহাজ খরচ প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার। যার প্রায় ৯৫ শতাংশ বিদেশি জাহাজ মালিকরা নিয়ে যাচ্ছে। বিএসসির বহরে ৪০-৫০টি জাহাজ থাকা বাঞ্ছনীয় হলেও অর্থাভাবে গত ২৭ বছরে কোনো জাহাজ সংযোজিত হয়নি। সর্বশেষ ১৯৯১ সালে ‘এমভি বাংলার শিখা’ জাহাজটি সংগৃহীত হয়েছিল। সরকারের উন্নয়ন সহযোগী এবং ব্লু-ইকোনমি ধারণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রূপকল্প-২০২১ এবং ২০৪১ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিশ্ব মানের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক শিপিং সংস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে মিশ্র বাণিজ্যিক জাহাজ বহর সৃষ্টিসহ আনুষঙ্গিক নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
চীন সরকারের অর্থায়নে ৩টি প্রোডাক্ট অয়েল ও ৩টি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ ক্রয় প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে দুইটি জাহাজ বিএসসির বহরে সংযোজন করা হয়েছে। অবশিষ্ট জাহাজগুলো আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বিএসসির বহরে সংযোজিত হবে।
রামপাল, পায়রা ও মাতারবাড়ীতে তিনটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের জন্য বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করা হবে। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে কয়লার জোগান নিরবচ্ছিন্ন করতে ৮০ হাজার টনের ২টি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার এবং মাদার ভ্যাসেল থেকে লাইটারিংয়ের জন্য ১০টি ১০-১৫ হাজার টন ক্ষমতার বাল্ক ক্যারিয়ার কেনার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ক্রুড অয়েল পরিশোধন ক্ষমতা ২০২০ সালে দ্বিগুণ হবে। সব ক্রুড অয়েল বিএসসির নিজস্ব জাহাজের মাধ্যমে পরিবহনের জন্য ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টন ক্ষমতার ২টি নতুন মাদার ট্যাংকার কেনা হবে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) প্রতি বছর ৩০ লাখ মেট্রিকটন ডিজেল অয়েল এবং সাড়ে ৩ লাখ টন জেট ফুয়েল আমদানি করে। ইস্টার্ন রিফাইনারির বাস্তবায়নাধীন ২টি সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আমদানি করা ডিজেল ও জেট ফুয়েল পরিবহনের লক্ষ্যে ৮০ হাজার টন ক্ষমতার মাদার প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার কেনা হবে।
দেশের গ্যাস সংকট নিরসনের জন্য সরকার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করছে। কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে এফএসআরইউ টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে, যা দেশের জাতীয় গ্যাস গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত। এলএনজি আমদানির জন্য বিএসসির ১ লাখ ৪০ হাজার ঘনমিটার ধারণ ক্ষমতার ২টি, ১ লাখ ৭৪ হাজার ঘনমিটারের ২টি, ১ লাখ ৮০ হাজার ঘনমিটারের ২টি এলএনজি ভ্যাসেল যুক্ত করতে ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
‘বাংলার সৌরভ’ ও ‘বাংলার জ্যোতি’ দুটির জায়গায় ৩০-৩৫ হাজার টন ক্ষমতার নতুন ক্রুড অয়েল ট্যাংকার প্রতিস্থাপন করা হবে।
শ্রীলঙ্কাসহ বিমসটেক দেশগুলোর মধ্যে ফিডার সার্ভিস চালুর লক্ষে চারটি ১২শ থেকে দেড় হাজার টিইইউ’স ধারণ ক্ষমতার সেলুলার কনটেইনার জাহাজ ক্রয় প্রকল্প নিয়েছে বিএসসি।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, আরপিও’র মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে নেওয়া ৩১৩ কোটি ৭০ লাখ টাকার মধ্যে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৭৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকায় ২৫ তলা ভবন নির্মাণে ৫৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, শেয়ার বাজারজাতকরণে ১৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, চীন থেকে ৬টি জাহাজ কেনা খাতে ৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিএসসি ১২৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা আয় ও ১১৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। মুনাফা করেছে ১২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মুনাফা হয়েছিল ৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এবার শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৬ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ সুপারিশ করেছে বিএসসি।শনিবার (২৪ নভেম্বর) চট্টগ্রামে এজিএম অনুষ্ঠিত হবে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএসসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ, সচিব খালেদ মাহমুদ, উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. আতাউর রহমান, মো. আহসান-উল-করিম, লে. কমান্ডার এম আসিব রায়হান, মুহাম্মদ আবদুল জব্বার, আবুল কাশেম মাহমুদ, মো. আজমগীর, ক্যাপ্টেন মো. মুজিবুর রহমান, ক্যাপ্টেন জামাল হোসেন তালুকদার প্রমুখ।
-সংগৃহীত(বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম)